ডিজিটাল মার্কেটিং কি, কেনো এবং কিভাবে
ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) শব্দটাকি দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে?
আমাকে যদি বলা হয় ডিজিটাল মার্কেটিং কি তা খুব কম শব্দে বলতে তাহলে আমি বলবো ডিজিটাল মার্কেটিং হলো অনলাইন মার্কেটিং (Online Marketing)।
এবার একটু ভেবে দেখুন কি কি ভাবে একজন ব্যবসায়ী তার প্রোডাক্টের অনলাইন মার্কেটিং করতে পারেন।
সবগুলো উপায়ই কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং।
এই মুহুর্তে আপনি হয়ত আসছে শীতের প্রস্তুতির জন্য হুডির ডিজাইন দেখছেন।
এর কিছুক্ষণ পর আপনার ফেসবুক নিউজফিড, মেসেঞ্জারে বিভিন্ন হুডি কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপন আসা শুরু করল।
আপনি একটা ওয়েবসাইটে ঢুকলেন, সেখানেও
বিভিন্ন সাইজের হুডির বিজ্ঞাপন ব্যানার।
কিছু কি ধরতে পারছেন? হ্যাঁ,
এগুলো
ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল
মার্কেটিং এ সবথেকে ভালোভাবে টার্গেট মার্কেটিং করা যায় এবং ক্রেতার প্রতিক্রিয়া ট্র্যাক করা যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর
আরো বেশকিছু সুবিধা আছে যার কারণে আমি মনে করি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারও দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার থাকা প্রয়োজন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এই সুবিধাগুলো বোঝার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরণগুলো আমাদের জানতে হবে।
চলুন জেনে নিই এগুলো কিভাবে ব্যবহার করা হয়, লাভই বা কতটুকু হয় এগুলো ব্যবহার করলে-
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও Search Engine Optimization-
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন,
যেটাকে আমরা SEO নামে চিনি। অনলাইনে
প্রচুর কোর্স পাবেন SEO এর উপর। নামটা
একটু কঠিন লাগতে পারে।
সহজ কথায় কনসেপ্ট টা বলি। এই
যে আমার এই লেখাটা ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে। এখন আপনি যদি গুগলে
“ডিজিটাল মার্কেটিং” লিখে সার্চ করেন তাহলে কি
আমার লেখাটা পাচ্ছেন? হয়তো পাচ্ছেন না। মাত্র
ত লেখাটা লিখলাম।
এখন আমি চাচ্ছি আমার লেখাটা গুগল সার্চে প্রথম
দিকে দেখাক।
এটা মাথায় রেখে আমার লেখাটা ইমপ্রুভ করলাম। ছয়মাস
পর গুগলে আমি যখন “ডিজিটাল মার্কেটিং” লিখে সার্চ করছি তখন আমার লেখাটা একদম প্রথমে দেখাচ্ছে। এই
যে গুগলে স্পেসিফিক একটা শব্দ বা কি-ওয়ার্ড সার্চে
আমার কনটেন্ট সবার আগে দেখালো এটার জন্য আমি যা যা করেছি এগুলোকেই SEO বলে।
কনসেপ্ট ক্লিয়ার!
আচ্ছা।
এবার বলি কিভাবে এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
করা যায়।
যে শব্দের বিপরীতে অপটিমাইজেশন করতে চাচ্ছেন
সেই শব্দ নিয়ে বেশি বেশি ন্যাচারাল সেন্টেন্স লিখুন। আগে
অনেকে কনটেন্টের শেষে সাদা রং এ টার্গেটেড কি-ওয়ার্ড
লিখে রাখত।
“ডিজিটাল মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং,
ডিজিটাল মার্কেটিং ..” এভাবে একশতবার কেউবা এক
হাজারবার লিখে রাখত।
আগে এটা কিছুটা কাজ করলেও এখন কাজ তো হবেই না,
উল্টো কনটেন্ট ব্লক হয়ে যাবে। সময়ের
সাথে সাথে গুগলের এলগরিদমও আরও পরিণত হচ্ছে। তাই সাবধান!
আপনার টার্গেটেড কি-ওয়ার্ড হেডলাইন, সাব- হেডলাইন এবং প্যারার মধ্যে ব্যবহার করুন ন্যাচারালি
যতটা সম্ভব।
স্প্যামিং করলে কিন্তু শেষ।
প্রথমদিকে আপনার কনটেন্ট ফেসবুকে শেয়ার
করুন।
কিছু কমেন্ট পাওয়ার চেষ্টা করুন। সুন্দরভাবে
বিস্তারিত রিপ্লাই দিন।
কমেন্ট সেকশনের হেলদি কনভারসেশন
SEO তে সাহায্য করবে। আসলে সবকথার মূল কথা
হচ্ছে যারা আপনার লেখা পড়বে বা ভিডিও দেখবে তারা যদি আসলেই উপকৃত হয় তাহলে অন্যদেরও
বলবে ভিডিওটা দেখ বা লেখাটা হেল্পফুল পড়ে দেখ। এধরণের
এঙ্গেজমেন্ট SEO তে ভাল অবস্থান পেতে সাহায্য
করবে।
তো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন হচ্ছে এরকম ছোট
ছোট অনেকধরনের কৌশল করা যেগুলোর মাধ্যমে গুগল এলগরিদম আপনার কনটেন্টকে বাকিদের থেকে
বেটার মনে করবে এবং সার্চে প্রথমে দেখাবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ
দক্ষ একজন ডিজিটাল মার্কেটার এর যেমন SEO তে পটু
হতে হয় তেমনি প্রফেশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরও SEO জানাটা অনেকটা
বাধ্যতামূলক।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং Search Engine Marketing –
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং দুরকমের হয়।
অরগানিক আর পেইড।
উপরে যে SEO নিয়ে বললাম ত এভাবে যখন সার্চে আমার লেখাটা প্রথমে আসছে তখন আমাকে এর জন্য কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।
এটা অরগানিক।
এখন ধরা যাক আমার লেখা টার্গেটেড কি-ওয়ার্ডে সার্চ রেজাল্টে আসছে না।
তাই গুগলকে আমি কিছু টাকা দিয়ে বললাম এই কি-ওয়ার্ড সার্চে আমার কনটেন্ট টা সবার আগে দেখাও।
এটা হচ্ছে পেইড সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং। একটা উদাহরণ দেই চলেন।
তারেক মতিঝিলে থাকে বা এমন এলাকায় থাকে যেখান থেকে নার্সারী দোকানগুলো বেশ দূরে দূরে। তো সে তার ছাদে বেশি বিক্রীত কয়েকটি গাছের চারা, টব আর কিছু আনুষঙ্গিক নিয়ে ছোটোখাটো নার্সারী করলো। কাস্টমার পাওয়ার জন্য মার্কেটিং করা দরকার। তারেক তার নার্সারির অনলাইন মার্কেটিং এর দায়িত্ব দিলো ডিজিটাল মার্কেটার আরিফকে। ডিজিটাল মার্কেটার আরিফ পেইড সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিংকে বেছে নিলো। সেটাপ হলো এরকম যে- তারেকের বাসার ১ কিলোমিটারের বৃত্তাকার এরিয়ার মধ্যে গুগলে যারা নার্সারি, এবং তারেকের কাছে থাকা আইটেমগুলোর ব্যাপারে সার্চ করবে তারা তারেকের নার্সারিকে সবার প্রথমে দেখতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই দূরের নার্সারিতে যাওয়ার আগে তারেকের নার্সারি একবার দেখে আসাটা পটেনশিয়াল ক্রেতারা বিবেচনা করবেন। আর এভাবে তারেক খুবই স্পেসিফিকভাবে তার পটেনশিয়াল কাস্টমারদের কাছে সফল মার্কেটিং করলো।
উদাহরণের ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসাকে ফোকাস করার কারণ হচ্ছে ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিংকে গুরুত্ব দেয়া হয় না বা আবছা আবছা জ্ঞান নিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংএর কাজ সারা হয়।
আসলে ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল মার্কেটিং এর স্কোপ এবং পসিবিলিটিকে ফুলস্কেলে প্রপারলি কাজে লাগানো উচিত।
কতটা মার্কেটিং হচ্ছে, আরো কতটা বৃদ্ধি/কমানো উচিত, রিটার্ন কাস্টমার কেমন, কাস্টমার বিহেভিয়ার ট্র্যাকিং এসব কিছু এনালাইসিসের মাধ্যমে ছোট বাজেটে ম্যাক্সিমাম আউটপুট নিয়ে আসার মাধ্যমেই তো ব্যবসা এগিয়ে যাবে।
এজন্য আমি মনে করি প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটারের সাহায্য নেয়া সম্ভব না হলে নিদেনপক্ষে উদ্যোক্তার নিজেরই একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে ফেলা উচিত।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং Social Media Marketing-
সোশ্যাল
মিডিয়া মার্কেটিং মানে হলো ফেসবুক, টুইটার,
ইন্সটাগ্রাম, টিকটক এসবে মার্কেটিং। তবে
আমাদের দেশের বিবেচনায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংকে ফেসবুক বেজড মার্কেটিং বললে খুব
একটা ভুল হবে না।
খুবই সিলেক্টিভ কিছু প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম,
টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার দের স্পন্সর করে প্রমোশন চালানো গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে
এটার দরকার পড়ে না।
একি সেগমেন্ট ফেসবুকেও করা সম্ভব। এজন্য
অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজ থাকাটা মাস্ট। ফেসবুক
মার্কেটিং এ যেটা হয় তা হচ্ছে র্যানডমলি বুস্টিং
করে মার্কেটিং এর কাজ সারা হয়। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই
দেখবেন কতটুকু এরিয়ার মধ্যে বুস্ট হবে, কোন
এজের কোন জেন্ডারের মানুষ দেখবে, কোন বিষয়ে আগ্রহী মানুষজন এড
দেখবে, কখন দেখবে এরকম অনেককিছু কাস্টমাইজ করা সম্ভব। এতে
করে পটেনশিয়াল কাস্টমারের কাছে রিচ বাড়বে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ
এক্সপার্ট হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই বুস্টিংগুলোকে স্ট্রাকচারড ওয়েতে ব্যবহার করে সম্ভাব্য
সবথেকে ভাল আউটকাম বের করা।
ভিডিও মার্কেটিং Video Marketing-
ভিডিও
মার্কেটিং এর ব্যাপারে সবাই মোটামুটি পরিচিত। গতানুগতিক
ভিডিও বিজ্ঞাপনের বাইরে জনপ্রিয় ইউটিউবারদের স্পন্সর বা রিভিউ করানো,
ছোট ছোট এনিমেটেড ভিডিও করে ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি দাড় করানোতে ভিডিও
মার্কেটিং
এর প্রয়োজন পড়ে।
বড় বাজেটের খেলা।
তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ২০-৩০ সেকেন্ডের থিম ভিডিও করতে পারেন আপনার ব্যবসার ক্ষেত্র বুঝে।
ব্লগিং Blogging-
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ব্লগিং কিন্তু খুবই হেল্পফুল একটি টুল। একটি স্পেসিফিক টপিকে খুব ভাল ভাল SEO করা কয়েকটি ব্লগ আর্টিকেল লিখে নিতে পারলে এগুলো বেশ হেলদি একটা ট্রাফিক জেনারেট করবে নিয়মিত যারা কিনা সে বিষয়টাতে জানতে আগ্রহী। ঠিক একারনেই টেন মিনিট স্কুল, পাঠাও, ফুডপান্ডা, খোলা বাকসো সহ পপুলার সাইটগুলোতে তাদের মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্লগ সেকশন রাখতে দেখবেন। যাদের ব্যবসা মোটামুটি অনলাইন বেজড তাদের অনলাইন মার্কেটিং ব্লগিং ছাড়া অসম্পুর্ণ। আর যেসব বিজনেসের পক্ষে ব্লগ সেকশন মেইনটেইন করা সম্ভব না তারা ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ হিসেবে ভাল SEO করা কিছু ব্লগে পেইড এড বা বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন।
এই যে আমি এই ব্লগটা লিখছি, যদি আল্লাহর রহমতে লেখাটায় নিয়মিত ভাল ট্রাফিক পাই তাহলে কিছু ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স রেকমেন্ড করার চেষ্টা করবো আমার এই লেখায়। এখান থেকে যারা লিংকে ভিজিট করে কোর্সে এনরোল হবেন তার বিপরীতে হয়ত সেই প্রতিষ্ঠান আমাকে একটা কমিশন দিবে। এভাবে এই ব্লগটি থেকে আমার আয় হবে। কমেন্টের ফিডব্যাক অনুযায়ী সময়ে সময়ে রেকমেন্ডেশন আপডেট করার চেষ্টা করবো যাতে করে কাজের কোর্সগুলোই বেশি প্রমোট হয়।
ইমেইল মার্কেটিং Email Marketing-
এবং অন্যান্য Others-
ডিজিটাল মার্কেটিং এ আয় কেমন-
কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া যায় –
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন